নিজস্ব প্রতিবেদক :
পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, অন্যায়. দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এসবের ভিড়ে ভালো ও উদার মনের পুলিশ সদস্যও আছে।যারা সারাদিন রাস্তায় গরমে-ঘামে দাঁড়িয়ে থেকেও সাধারণ মানুষকে যেকোনো বিপদে সাহায্য করার আশাটুকু যাদের মন থেকে কখনো সরে যায় না। এমনই এক পুলিশ সদস্য মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট থানা অফিসার ইনচার্জ জনাব নাসির উদ্দিন মন্ডল।
জানা যায়, আজ মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা। টিক এ সময় ৯০ বছরের বৃদ্ধ লাঠিতে ভর দিয়ে থানায় এসেছেন বিচার চাইতে। থানার অফিসার ইনচার্জ নাসির উদ্দিন মন্ডলকে গিয়ে বৃদ্ধা বলেন,বাবা ,আমার বিচার কেউ করেনি ,তুমি আমার বিচার করে দাও। বৃদ্ধা বলেন আমাকে ছেলে, ছেলের বৌ ভাত কাপড় দেয় না, অসুস্থ হলে দেখেনা, খবরও নেয় না, আমার ছেলে ,আমার ঘর আমি হলাম পর। তুমি আমার বিচার করে দাও বাবা। বৃদ্ধার এমন আকুতি-মিনতি ও তার ছেলে ও ছেলের বৌ এর অভিযোগ গুলো অফিসার ইনচার্জ নাসির উদ্দিন মন্ডল মনোযোগ সহকারে শুনলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন মা দুপুরে ভাত খেয়েছেন? বৃদ্ধা বলল, না বাবা, তাহলে আগে ভাত খান আমার থানায়, তারপরে আপনার কাজ করে দেবো। খাওয়া শেষ হল ওসি নাসির উদ্দিন মন্ডল বৃদ্ধা মহিলাকে ধরে গাড়ির সামনে বসালেন বললেন চলেন আপনার বাড়ি যাবো। গাড়ি নিয়ে তার বাড়িতে থানা পুলিশ পৌঁছালে উপস্থিত স্থানীয় লোকজনের সামনে বৃদ্ধার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কিছু কথা বলে বৃদ্ধার ছেলে ও ছেলের বৌ এর কাছে অঙ্গীকার নিয়ে বৃদ্ধাকে তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয় । কিছুক্ষন আগে যে চোখে অশ্রু ঝরছিল ,সেই চোখ দিয়ে অফিসার ইনচার্জ নাসির উদ্দিন মন্ডলের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে বৃদ্ধা বললেন ,বাবা আল্লাহ তোমাদের মঙ্গল করুক। এমন জনসচেতনতা মুলক কার্যক্রম ও ভোলাহাট থানা অফিসার ইনচার্জ জনাব নাসির উদ্দিন মন্ডলের মহানুভবতার আলোচনা চলছে পুরো ভোলাহাট জুরে। ভোলাহাট বাসী এমই একজন অফিসার ইনচার্জ চেয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন অনেকে।
ভোলাহাট বাসীরা বলেন, এরকম কিছু মানুষের জন্যই পৃথিবীর ভালবাসা-সহানুভুতিগুলো টিকে আছে, টিকে থাকবে। তার এমন কর্ম দেখে মানুষ পাবে ভালবাসার অনুপ্রেরণা। ‘মানুষ মানুষের জন্য’ ভুপেন হাজারিকার এ গানটির যথার্থতা হয়তো ভোলাহাট থানা অফিসার ইনচার্জ জনাব নাসির উদ্দিন মন্ডলের মাধ্যমে বার বার স্মরণ করিয়ে দিবে মানুষকে।
এ বিষয়ে ভোলাহাট থানা অফিসার ইনচার্জ জনাব নাসির উদ্দিন তার ফেসবুকে লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো, দুপুর গড়িয়েছে অনেক আগেই। সকাল সকাল অফিসে এসেছি। অনেক গুলো প্রতিবেদনে স্বাক্ষর, অফিসারদের কাজের তদারকি,দু’চারজন সেবা প্রার্থীর বক্তব্য শুনে আইনগত সাজেশন দিয়ে একটু নিঃশ্বাস ছাড়লাম। মাঝে বলেছি কথা, পরিবারের সাথে, সন্তানদের সাথে। ওরা দুরে থাকে। কি যেন একটা শুনতা শুনতা অনুভব করছিলাম। ভাল লাগছিল না কিছুতেই। অফিস কক্ষের বাহিরে এক বৃদ্ধার কান্না কানে ভেসে এলো। কান্নাজড়িত কন্ঠে কি যেন অভিযোগ জানাচ্ছে সেন্ট্রি কনষ্টবল আর অফিসারদের কাছে। উঠে এলাম চেয়ার ছেড়ে। দেখিলাম আমি তাঁরে। রুগ্ন আর দূর্বল শরীরের নব্বই বছর বয়সের এক বৃদ্ধা!! ধনুকের মত শরীর বেঁকে গেছে। লাঠি তার সম্বল। ইতোপূর্বে জীবনে কখনো থানায় আসেননি। কখনো তেমন প্রয়োজন হয়নি। আজ নব্বই বছর বয়সে প্রয়োজন হয়েছে। আমার কক্ষে নিয়ে চেয়ারে বসালাম। ধৈর্য ধরে শিশুর মত আধো আধো বলা কথাগুলো বুঝবার চেষ্টা করলাম। চোখে তাঁর অশ্রুজল। শুনে ব্যথিত হলাম। এমন কেন হয়! শেষ জীবনে প্রয়োজন কি মানুষের ফুরিয়ে যায়!! ছেলে আছে, মেয়ে আছে নাতি পুতি সব আছে। স্বামী তার গত হয়েছে কয়েক বছর আগে। স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি সবাইকে ভাগ করে দিয়েছেন। স্বামী বেঁচে থাকতে এমন অবহেলার পাত্র সে ছিল না। আজ তাঁর অভিযোগ কেউ তাঁকে দেখে না। ঠিকমত খেতে দেয় না। কাপড় দেয় না,মাথায় তেল দেয় না। গোসলের পর কাপড়গুলো ধুয়ে দেয় না। ভাল ভাবে তাঁর সাথে কেউ কথা বলে না। সব শুনে চোখ বন্ধ করে ভাবলাম কিছুক্ষণ। কিছু সময়ের জন্য ওসির চেয়ার ছেড়ে চলে গেছি এই নব্বই বছর বয়সের বৃদ্ধ মায়ের জীবনে।
একটা বিশ্বাস নিয়ে তিনি থানায় এসেছেন। শুনেছেন লোক মুখে, কেউ না পারলেও থানাওয়ালা বিচার করে দেয়। দেরী না করে, এক মুঠো ভাত খাইয়ে দিয়ে, তাঁরই টাকায় কেনা গাড়ি পুলিশ পিকাপে তুলে রওনা হলাম তাঁর গ্রামে। পুলিশ ভ্যান দেখে চর্তুরদিক হতে লোকজন হাজির। পুলিশ ভ্যান হতে তাঁকে ধরে নামালাম। আত্মীয় স্বজন সবাইকে পাওয়া গেল। মুরুব্বী শ্রেণীর লোকজনও হাজির। পরিবারটি যদিও গরীব, কিন্ত আমার কথায় লজ্জিত হল, অনুতপ্ত হল। এমন ভুল আর করবেন না মর্মে অঙ্গীকার করলেন। হাসি মুখে বৃদ্ধা মাকে তুলে দিলাম তাঁর আপনজনদের কাছে। বৃদ্ধা চোখের জল মুছে, আমার দিকে তাকিয়ে,এক তৃপ্তির মুচকি হাসি হাসলেন। আমারও বুকের ভিতর হতে বেরিয়ে গেল,” জীবনে তোমায় প্রভু,ডাকিতে পারিনি কভু।”
আজকের দিনে অন্তত একটা ভাল কাজ করলাম। সকালের উরু উরু মনটা ভাল হয়ে গেল।
Leave a Reply